Thursday, December 5, 2024
"অপরিচিতার স্মৃতি"
Wednesday, December 4, 2024
"ঝড়ের মাঝে ভালোবাসা"
Sunday, December 1, 2024
তিস্তা নদীর পাড়
সন্ধ্যা নেমে এসেছে তিস্তা নদীর পাড়ে। গোধূলির আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে জলরাশির বুকে। দূরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শাল-গাছগুলো অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। এ পাড়ে ছনের ছাউনি দেওয়া কাঁচা ঘর, আর ওপাড়ে বিস্তীর্ণ চরের মাঠ। নদী যেন এক বিভাজক, দুই ভিন্ন জগতকে আলাদা করে রেখেছে।
এই নদীর পাড়ে বসে আছে মায়া। বছর পঁচিশের মায়া এক সাধারণ গ্রাম্য মেয়ে, তবে তার চোখে যেন কোনো অদ্ভুত টান। চোখের দৃষ্টি গভীর, যেন হাজারো গল্পের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে। মায়া পা ঝুলিয়ে বসে আছে নদীর ধারে। পাশে তার একটা পুরনো ব্যাগ। ভেতরে কেবল একজোড়া জামাকাপড়, একটা ছোট আয়না, আর তার প্রিয় একটি বই—রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র।
মায়া আজ তার নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রামটা তার খুব চেনা, কিন্তু এখন আর সেখানে তার জায়গা নেই। চার বছর আগে যে মানুষটা তার জীবন ভরিয়ে তুলেছিল, সেই রাজীব তাকে ছেড়ে চলে গেছে। রাজীব তিস্তাপাড়ের এক জলজ্যান্ত স্বপ্ন ছিল মায়ার। কিন্তু শহরের চাকচিক্য রাজীবকে গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। যাওয়ার সময় সে মায়াকে বলেছিল, “তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না, মায়া। আমার জীবনটা অন্যভাবে গড়তে চাই।”
মায়া ভেবেছিল, সময় হয়তো সব বদলে দেবে। কিন্তু সময় তাকে শুধু একাকিত্ব দিয়েছে। তিস্তার ঢেউয়ের মতোই তার জীবন বয়ে গেছে, কিন্তু কোনো বাঁধ তাকে আটকে রাখতে পারেনি।
হঠাৎ নদীর ওপাড় থেকে ভেসে আসে এক নৌকার আওয়াজ। মায়া মাথা তুলে তাকায়। অন্ধকারে মৃদু আলো জ্বলে ওঠে। এক মাঝি টেনে আনছে তার নৌকাটি। মায়া বুঝতে পারে, এটিই তার জন্য অপেক্ষা করা নৌকা।
“আপা, যাবেন?” মাঝি প্রশ্ন করে।
মায়া মাথা নাড়ে। নৌকায় উঠে বসে। তিস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালে নৌকাটি স্থির হয়। বাতাসের ছোঁয়ায় মায়ার চুল এলোমেলো হয়ে যায়। সে হাত দিয়ে চুল সামলায় আর নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“আপা, কোথায় যাবেন?” মাঝি আবার জানতে চায়।
“জানি না। যে পারে পৌঁছাবেন, সেখানেই নেমে যাব,” মায়া বলে।
মাঝি খানিকটা বিস্মিত হয়। “জীবনের ঠিকানা ছাড়া কেউ চলে?”
মায়া হেসে ফেলে। “জীবন নিজেই তো এক যাত্রা। ঠিকানার খোঁজে যাত্রাটা হয়তো শুরু হয়, কিন্তু শেষে কোথায় থামবে, তা কেউ জানে না।”
মাঝি আর কিছু বলে না। নদীর ঢেউয়ের শব্দ আর মৃদু বাতাসের গুঞ্জনই এখন একমাত্র সঙ্গী।
মাঝপথে হঠাৎ মায়ার মনে পড়ে তার শৈশব। বাবার হাত ধরে এই তিস্তার পাড়ে কতবার ঘুরতে এসেছে সে। বাবার হাতে তৈরি কাঁথার শীতলতা, মায়ের রান্নার গন্ধ, ভাইয়ের সঙ্গে পুকুরে সাঁতার কাটা—সব স্মৃতি যেন জলরাশির মতো ফিরে আসে।
কিন্তু এখন নদীর পাড়ের সেই পুরনো গ্রাম তাকে আর আকর্ষণ করে না। তার মনে হয়, তিস্তা তাকে ডেকে বলছে, “চল, নতুন কিছু খুঁজে বের করি।”
নৌকা ওপাড়ে পৌঁছে। মায়া ধীরে ধীরে নেমে আসে। সামনে এক বিস্তীর্ণ চর। চরের শেষে একটা মাটির পথ দেখা যায়, যা মিশে গেছে অন্ধকারের ভেতর। মায়া সিদ্ধান্ত নেয়, ওই পথেই পা বাড়াবে।
তিস্তার পাড়ে এক নতুন গল্প শুরু হয়। এক মেয়ে তার পরিচিত গণ্ডি পেরিয়ে জীবনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার যাত্রায় বের হয়। নদীও যেন তাকে আশীর্বাদ জানিয়ে বলে, “যাও মায়া, তোমার নতুন ঠিকানার খোঁজ করো। তিস্তা তোমার সঙ্গেই আছে।”
-------- -ঃশেষ । ঃ--------
Sunday, November 24, 2024
সন্ধ্যার ঝিলমিল গল্প
পড়ন্ত বিকেলের লাল আলো সারা সমুদ্রতটকে সোনালী আভায় মেখে দিয়েছে। সমুদ্রের তরঙ্গগুলো যখন উপকূলে আছড়ে পড়ে, তখন সেগুলো যেন রূপালী গয়নার মতো ঝিকিমিকি করে উঠে। এসময় এক ছোট্ট বালিকা, নাম তার অনন্যা, দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের কিনারায়। তার বাম পা শক্ত করে বালুর ওপর স্থির, আর ডান পা সামান্য উঁচুতে, যেন উড়ন্ত কোনো পাখির মতো। ডান পায়ের বড় আঙ্গুলটি কেবল সমুদ্রের ঠাণ্ডা পানিকে ছুঁইছুঁই করছে।
অনন্যার চোখে উজ্জ্বলতা। সে নিজের কল্পনার
জগতে হারিয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে, সে যেন প্রকৃতির
কোনো নৃত্যশিল্পী, যে সমুদ্র আর
বাতাসের সুরে নেচে চলেছে। বাতাস তার সাদা ফ্রকের ঘের উড়িয়ে দিচ্ছে, আর তার চুলগুলো
যেন সূর্যের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।
অনন্যার এই নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো
খুব প্রিয়। সে প্রায়ই এখানে
আসে, নিজের কল্পনার রাজ্যে ডুব দেয়ার জন্য। তার মনে হয় সমুদ্রের ঢেউগুলো
তার মনের কথা বোঝে। ঢেউগুলো যেমন অস্থির কিন্তু সুরেলা, ঠিক তেমনই তার ভেতরেও চলছে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন।
আজ তার মনে অনেক প্রশ্ন। গতকাল সে মায়ের কাছে
জানতে চেয়েছিল, “মা, পাখিরা কেন উড়ে যেতে পারে, আর আমরা পারি
না?” মা হাসি দিয়ে
বলেছিলেন, “কারণ আমরা মাটির মানুষ। আমাদের কাজ হলো পৃথিবীকে সাজানো। পাখিরা আকাশকে সাজায়। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আলাদা।”
কিন্তু অনন্যার মন মেনে নিতে
পারছে না। তার মনে হয়, সে যেন মাটির
মানুষ নয়। তার মন চায় উড়তে।
সে কল্পনা করে, যদি তার ডানা থাকত, তবে সে উড়ে গিয়ে
সমুদ্রের ওপারে পৌঁছে যেত। হয়তো সেখানে একটা রাজকন্যার প্রাসাদ আছে, যেখানে সবকিছু তার নিজের মতো।
হঠাৎ, এক বড় ঢেউ
এসে তার ডান পায়ের আঙ্গুল পুরোপুরি ভিজিয়ে দেয়। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে সে বাস্তবে ফিরে
আসে। অনন্যা নিচু হয়ে পানিতে হাত ডুবিয়ে দেখে, ঢেউয়ের সাথে ঝিলমিল করা ছোট ছোট মাছগুলো খেলা করছে। সূর্যের আলো পড়লে সেগুলো যেন মুক্তোর মতো ঝিকমিক করে।
সে একটু সরে গিয়ে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখে পড়ে দূরে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছেন। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন। অনন্যা এগিয়ে গিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি এখানে সবসময়
বসে থাকেন?”
লোকটি মাথা নাড়িয়ে বলেন, “হ্যাঁ, সমুদ্র আমাকে ডাকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের গল্প আমি শুনি। তুমিও কি সমুদ্রের গল্প
শুনতে এসেছ, মেয়ে?”
অনন্যা হেসে বলে, “না, আমি উড়তে শিখতে এসেছি।”
লোকটি একটু বিস্মিত হয়ে বলে, “উড়তে? তুমি কীভাবে উড়বে?”
অনন্যা উচ্ছ্বসিত গলায় বলে, “আমি জানি না। কিন্তু আমি উড়তে চাই। পাখির মতো। ঢেউয়ের মতো। বাতাসের মতো।”
লোকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “তুমি জানো, উড়তে হলে শুধু ডানার প্রয়োজন হয় না। মন
যদি মুক্ত হয়, তবেই উড়তে পারো। তোমার কল্পনার ডানাই তোমাকে আকাশে ভাসিয়ে তুলবে। শুধু বিশ্বাস করতে হবে।”
অনন্যার মনে এক নতুন আশার
আলো জ্বলে ওঠে। সে বুঝতে পারে,
উড়তে গেলে কেবল শরীরের নয়, মনেরও প্রয়োজন হয়। পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোতে সে সমুদ্রের দিকে
তাকায়। ঢেউগুলো যেন তাকে মৃদু হাসি দিয়ে বলছে, “চেষ্টা করো। তুমি পারবে।”
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় অনন্যার মনে একটাই ভাবনা ঘুরছিল—উড়ার জন্য ডানার চেয়ে সাহসটাই বেশি প্রয়োজন। সমুদ্র তাকে এই সাহসটাই শিখিয়ে দিয়েছে।
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় অনন্যার মনে একটাই ভাবনা ঘুরছিল—উড়ার জন্য ডানার চেয়ে সাহসটাই বেশি প্রয়োজন। সমুদ্র তাকে এই সাহসটাই শিখিয়ে দিয়েছে।
আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন ।
Saturday, November 23, 2024
প্রেমের ফাঁদ
শহরের
প্রাণকেন্দ্রের একটি
জনপ্রিয় ক্যাফে। সারা
বছরই
কোলাহলে ভরপুর।
এক
সন্ধ্যায়, ক্যাফেটির কোণার
একটি
টেবিলে
চুপচাপ
বসে
আছে
রুদ্র।
এক
হাতে
কফির
কাপ,
অন্য
হাতে
একটি
বই।
দেখতে
বেশ
শান্ত,
কিন্তু
চোখে-মুখে একটা অদ্ভুত
উত্তেজনা।
রুদ্র
একজন
প্রাইভেট গোয়েন্দা। সে
সম্প্রতি এক
অদ্ভুত
মামলার
তদন্তে
নেমেছে। ক্লায়েন্ট, মৃদুলা,
অভিযোগ
করেছেন
যে
তার
ধনী
বাবা
একটি
বিপদজনক প্রেমের জালে
আটকে
গেছেন।
সেই
প্রেমিকা, রেশমি,
নাকি
কোনোভাবে মৃদুলার বাবার
সম্পত্তি দখলের
চেষ্টা
করছে।
রুদ্র
কাজ
শুরু
করল।
প্রথমেই রেশমিকে অনুসরণ। রেশমি
একজন
সুন্দরী, স্মার্ট এবং
রহস্যময়ী মেয়ে।
তার
চলাফেরা, কথা
বলার
ধরন,
সবকিছুতেই একটা
ভিন্ন
আকর্ষণ।
একদিন,
রেশমির
পিছু
নিয়ে
রুদ্র
পৌঁছে
গেল
একটি
অভিজাত
পার্টিতে। সেখানেই রেশমির
সাথে
প্রথমবার সামনাসামনি পরিচয়। রেশমি
রুদ্রকে দেখেই
মিষ্টি
হেসে
বলল,
"আপনার
চোখ
যেন
কিছু
খুঁজছে,
ঠিক
বললাম?"
রুদ্র
একটু
থমকে
বলল,
"আপনার
মতো
রহস্যময়ী একজনকে
দেখলে
তো
চোখে
খোঁজ
করতেই
হবে।"
রেশমি
হেসে
তার
পাশের
চেয়ারে বসতে
বলল।
কথোপকথনে রুদ্র
ধীরে
ধীরে
বুঝতে
পারল,
রেশমি
শুধু
সুন্দরী নয়,
অত্যন্ত বুদ্ধিমতীও।
এরপরের
কয়েকদিন, রুদ্র
বুঝতে
পারল
রেশমি
তাকে
লক্ষ্য
করছে।
আর
রেশমির
দিকে
যতই
এগিয়ে
যাচ্ছে,
ততই
যেন
জালের
মধ্যে
জড়িয়ে পড়ছে।
এক
সন্ধ্যায় রেশমি
রুদ্রকে একটি
নির্জন
রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রণ জানাল।
রুদ্র
ভাবল,
আজই
হয়তো
সত্যি
জানতে
পারবে।
রেশমি
তার
দিকে
তাকিয়ে বলল,
"তুমি
কি
জানতে
চাও,
আমি
আসলে
কে?"
রুদ্র
বলল,
"হ্যাঁ।"
রেশমি
হেসে
বলল,
"আমি
তো
তোমারই
ফাঁদে
পড়েছি,
রুদ্র।
আমি
জানি
তুমি
আমার
পিছু
নিচ্ছো। কিন্তু
আমার
মনে
হয়,
তোমারও
তো
আমাকে
জানার
প্রয়োজন নেই।
তুমি
কি
সত্যি
মনে
করো
আমি
কোনো
ষড়যন্ত্র করছি?"
রুদ্র
কিছুক্ষণ চুপ।
তার
সমস্ত
অনুমান
যেন
ধোঁয়াশায় হারিয়ে গেল।
রেশমি
বলল,
"কখনও
কখনও
যা
আমরা
দেখি,
তা
সত্য
নয়।
হয়তো
আমি
শুধু
ভালোবাসতে চেয়েছি, কিন্তু
মানুষ
সেটা
বিশ্বাস করতে
শেখেনি।"
রেশমি
উঠে
চলে
গেল।
রুদ্র
তার
কফির
কাপ
হাতে
নিয়ে
বসে
রইল।
সত্যিই
কি
প্রেম
ছিল,
নাকি
ফাঁদ?
আজও
সেই
প্রশ্নের উত্তর
তার
কাছে
নেই।
শেষ।