পড়ন্ত বিকেলের লাল আলো সারা সমুদ্রতটকে সোনালী আভায় মেখে দিয়েছে। সমুদ্রের তরঙ্গগুলো যখন উপকূলে আছড়ে পড়ে, তখন সেগুলো যেন রূপালী গয়নার মতো ঝিকিমিকি করে উঠে। এসময় এক ছোট্ট বালিকা, নাম তার অনন্যা, দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের কিনারায়। তার বাম পা শক্ত করে বালুর ওপর স্থির, আর ডান পা সামান্য উঁচুতে, যেন উড়ন্ত কোনো পাখির মতো। ডান পায়ের বড় আঙ্গুলটি কেবল সমুদ্রের ঠাণ্ডা পানিকে ছুঁইছুঁই করছে।
অনন্যার চোখে উজ্জ্বলতা। সে নিজের কল্পনার
জগতে হারিয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে, সে যেন প্রকৃতির
কোনো নৃত্যশিল্পী, যে সমুদ্র আর
বাতাসের সুরে নেচে চলেছে। বাতাস তার সাদা ফ্রকের ঘের উড়িয়ে দিচ্ছে, আর তার চুলগুলো
যেন সূর্যের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।
অনন্যার এই নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো
খুব প্রিয়। সে প্রায়ই এখানে
আসে, নিজের কল্পনার রাজ্যে ডুব দেয়ার জন্য। তার মনে হয় সমুদ্রের ঢেউগুলো
তার মনের কথা বোঝে। ঢেউগুলো যেমন অস্থির কিন্তু সুরেলা, ঠিক তেমনই তার ভেতরেও চলছে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন।
আজ তার মনে অনেক প্রশ্ন। গতকাল সে মায়ের কাছে
জানতে চেয়েছিল, “মা, পাখিরা কেন উড়ে যেতে পারে, আর আমরা পারি
না?” মা হাসি দিয়ে
বলেছিলেন, “কারণ আমরা মাটির মানুষ। আমাদের কাজ হলো পৃথিবীকে সাজানো। পাখিরা আকাশকে সাজায়। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আলাদা।”
কিন্তু অনন্যার মন মেনে নিতে
পারছে না। তার মনে হয়, সে যেন মাটির
মানুষ নয়। তার মন চায় উড়তে।
সে কল্পনা করে, যদি তার ডানা থাকত, তবে সে উড়ে গিয়ে
সমুদ্রের ওপারে পৌঁছে যেত। হয়তো সেখানে একটা রাজকন্যার প্রাসাদ আছে, যেখানে সবকিছু তার নিজের মতো।
হঠাৎ, এক বড় ঢেউ
এসে তার ডান পায়ের আঙ্গুল পুরোপুরি ভিজিয়ে দেয়। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে সে বাস্তবে ফিরে
আসে। অনন্যা নিচু হয়ে পানিতে হাত ডুবিয়ে দেখে, ঢেউয়ের সাথে ঝিলমিল করা ছোট ছোট মাছগুলো খেলা করছে। সূর্যের আলো পড়লে সেগুলো যেন মুক্তোর মতো ঝিকমিক করে।
সে একটু সরে গিয়ে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখে পড়ে দূরে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছেন। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন। অনন্যা এগিয়ে গিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি এখানে সবসময়
বসে থাকেন?”
লোকটি মাথা নাড়িয়ে বলেন, “হ্যাঁ, সমুদ্র আমাকে ডাকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের গল্প আমি শুনি। তুমিও কি সমুদ্রের গল্প
শুনতে এসেছ, মেয়ে?”
অনন্যা হেসে বলে, “না, আমি উড়তে শিখতে এসেছি।”
লোকটি একটু বিস্মিত হয়ে বলে, “উড়তে? তুমি কীভাবে উড়বে?”
অনন্যা উচ্ছ্বসিত গলায় বলে, “আমি জানি না। কিন্তু আমি উড়তে চাই। পাখির মতো। ঢেউয়ের মতো। বাতাসের মতো।”
লোকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “তুমি জানো, উড়তে হলে শুধু ডানার প্রয়োজন হয় না। মন
যদি মুক্ত হয়, তবেই উড়তে পারো। তোমার কল্পনার ডানাই তোমাকে আকাশে ভাসিয়ে তুলবে। শুধু বিশ্বাস করতে হবে।”
অনন্যার মনে এক নতুন আশার
আলো জ্বলে ওঠে। সে বুঝতে পারে,
উড়তে গেলে কেবল শরীরের নয়, মনেরও প্রয়োজন হয়। পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোতে সে সমুদ্রের দিকে
তাকায়। ঢেউগুলো যেন তাকে মৃদু হাসি দিয়ে বলছে, “চেষ্টা করো। তুমি পারবে।”
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় অনন্যার মনে একটাই ভাবনা ঘুরছিল—উড়ার জন্য ডানার চেয়ে সাহসটাই বেশি প্রয়োজন। সমুদ্র তাকে এই সাহসটাই শিখিয়ে দিয়েছে।
সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় অনন্যার মনে একটাই ভাবনা ঘুরছিল—উড়ার জন্য ডানার চেয়ে সাহসটাই বেশি প্রয়োজন। সমুদ্র তাকে এই সাহসটাই শিখিয়ে দিয়েছে।
আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন ।
No comments:
Post a Comment