সন্ধ্যা নেমে এসেছে তিস্তা নদীর পাড়ে। গোধূলির আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে জলরাশির বুকে। দূরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শাল-গাছগুলো অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। এ পাড়ে ছনের ছাউনি দেওয়া কাঁচা ঘর, আর ওপাড়ে বিস্তীর্ণ চরের মাঠ। নদী যেন এক বিভাজক, দুই ভিন্ন জগতকে আলাদা করে রেখেছে।
এই নদীর পাড়ে বসে আছে মায়া। বছর পঁচিশের মায়া এক সাধারণ গ্রাম্য মেয়ে, তবে তার চোখে যেন কোনো অদ্ভুত টান। চোখের দৃষ্টি গভীর, যেন হাজারো গল্পের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে। মায়া পা ঝুলিয়ে বসে আছে নদীর ধারে। পাশে তার একটা পুরনো ব্যাগ। ভেতরে কেবল একজোড়া জামাকাপড়, একটা ছোট আয়না, আর তার প্রিয় একটি বই—রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র।
মায়া আজ তার নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রামটা তার খুব চেনা, কিন্তু এখন আর সেখানে তার জায়গা নেই। চার বছর আগে যে মানুষটা তার জীবন ভরিয়ে তুলেছিল, সেই রাজীব তাকে ছেড়ে চলে গেছে। রাজীব তিস্তাপাড়ের এক জলজ্যান্ত স্বপ্ন ছিল মায়ার। কিন্তু শহরের চাকচিক্য রাজীবকে গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। যাওয়ার সময় সে মায়াকে বলেছিল, “তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না, মায়া। আমার জীবনটা অন্যভাবে গড়তে চাই।”
মায়া ভেবেছিল, সময় হয়তো সব বদলে দেবে। কিন্তু সময় তাকে শুধু একাকিত্ব দিয়েছে। তিস্তার ঢেউয়ের মতোই তার জীবন বয়ে গেছে, কিন্তু কোনো বাঁধ তাকে আটকে রাখতে পারেনি।
হঠাৎ নদীর ওপাড় থেকে ভেসে আসে এক নৌকার আওয়াজ। মায়া মাথা তুলে তাকায়। অন্ধকারে মৃদু আলো জ্বলে ওঠে। এক মাঝি টেনে আনছে তার নৌকাটি। মায়া বুঝতে পারে, এটিই তার জন্য অপেক্ষা করা নৌকা।
“আপা, যাবেন?” মাঝি প্রশ্ন করে।
মায়া মাথা নাড়ে। নৌকায় উঠে বসে। তিস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালে নৌকাটি স্থির হয়। বাতাসের ছোঁয়ায় মায়ার চুল এলোমেলো হয়ে যায়। সে হাত দিয়ে চুল সামলায় আর নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“আপা, কোথায় যাবেন?” মাঝি আবার জানতে চায়।
“জানি না। যে পারে পৌঁছাবেন, সেখানেই নেমে যাব,” মায়া বলে।
মাঝি খানিকটা বিস্মিত হয়। “জীবনের ঠিকানা ছাড়া কেউ চলে?”
মায়া হেসে ফেলে। “জীবন নিজেই তো এক যাত্রা। ঠিকানার খোঁজে যাত্রাটা হয়তো শুরু হয়, কিন্তু শেষে কোথায় থামবে, তা কেউ জানে না।”
মাঝি আর কিছু বলে না। নদীর ঢেউয়ের শব্দ আর মৃদু বাতাসের গুঞ্জনই এখন একমাত্র সঙ্গী।
মাঝপথে হঠাৎ মায়ার মনে পড়ে তার শৈশব। বাবার হাত ধরে এই তিস্তার পাড়ে কতবার ঘুরতে এসেছে সে। বাবার হাতে তৈরি কাঁথার শীতলতা, মায়ের রান্নার গন্ধ, ভাইয়ের সঙ্গে পুকুরে সাঁতার কাটা—সব স্মৃতি যেন জলরাশির মতো ফিরে আসে।
কিন্তু এখন নদীর পাড়ের সেই পুরনো গ্রাম তাকে আর আকর্ষণ করে না। তার মনে হয়, তিস্তা তাকে ডেকে বলছে, “চল, নতুন কিছু খুঁজে বের করি।”
নৌকা ওপাড়ে পৌঁছে। মায়া ধীরে ধীরে নেমে আসে। সামনে এক বিস্তীর্ণ চর। চরের শেষে একটা মাটির পথ দেখা যায়, যা মিশে গেছে অন্ধকারের ভেতর। মায়া সিদ্ধান্ত নেয়, ওই পথেই পা বাড়াবে।
তিস্তার পাড়ে এক নতুন গল্প শুরু হয়। এক মেয়ে তার পরিচিত গণ্ডি পেরিয়ে জীবনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার যাত্রায় বের হয়। নদীও যেন তাকে আশীর্বাদ জানিয়ে বলে, “যাও মায়া, তোমার নতুন ঠিকানার খোঁজ করো। তিস্তা তোমার সঙ্গেই আছে।”
-------- -ঃশেষ । ঃ--------
DoctypePDF.com is the best PDF search engine that helps you find PDF documents quickly and easily. You can search for free eBooks, research papers, guides, and more. Just type what you need, and DoctypePDF shows you results with the filetype PDF. It’s one of the best PDF search engines for students, researchers, and anyone looking to download PDF files for free.
ReplyDeleteDoctypePDF.com was created by Mir Abul Kashem, a blogger, web designer, and web developer from Dhaka, Bangladesh. He was born on October 5, 1998, and is known for building useful websites that help people find information easily.