Wednesday, November 20, 2024

ভালোবাসার বন্ধন






  কথা, ছোট্ট মফস্বল শহরের এক প্রাণবন্ত মেয়ে। তার হাসির ঝিলিক যেন চারপাশের মানুষদের মন ভালো করে দেয়। সবার প্রিয় এই মেয়েটির জীবনে ঢুকে পড়ে এক অদ্ভুত অনুভূতির ঝড়, যখন তার দেখা হয় অভ্রর সঙ্গে। অভ্র, শান্ত-গম্ভীর এক যুবক, যে শহরে নতুন এসে চাকরি শুরু করেছে।

প্রথম দেখা হয় শহরের একটি লাইব্রেরিতে। কথা চুপচাপ একটি বই পড়ছিল, আর অভ্র তার প্রয়োজনীয় কিছু নোট খুঁজছিল। কথার বইয়ের পাতা ওল্টানোর শব্দে অভ্রর মনোযোগ ভেঙে যায়। "ম্যাডাম, একটু আস্তে ওল্টানো যায়?" অভ্রর এই কথাতে কথা কিছুটা ক্ষেপে যায়, "আপনার একার লাইব্রেরি নাকি?"

সেই প্রথম আলাপ। ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কথা ছিল প্রাণবন্ত, আর অভ্র ছিল শান্ত। কথার খুনসুটিতে অভ্রর মুখে হাসি ফুটে উঠত, যা আগে কেউ খুব একটা দেখেনি।

একদিন, কথার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারে আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। কথা তখন পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ছোট্ট টিউশনি শুরু করে। অভ্র এই খবর জানার পর নিজে থেকেই সাহায্যের হাত বাড়ায়। "বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো তো দায়িত্ব," অভ্র বলে।

দিনগুলো এগিয়ে যায়। কথার জীবনের কষ্টগুলোর মাঝে অভ্র যেন এক আশ্রয়স্থল। কিন্তু অভ্রর চোখে কথা শুধু একজন বন্ধু নয়। তার মনের গভীরে জন্ম নেয় এক গভীর ভালোবাসা। একদিন, শহরের নদীর ধারে বসে অভ্র কথাকে জিজ্ঞাসা করে, "কথা, যদি সব ঝড় শেষে তোমার পাশে কেউ থাকে, তুমি কি তাকে গ্রহণ করবে?"

কথা একটু অবাক হয়ে উত্তর দেয়, "ঝড় শেষে যদি সে সত্যিই থাকে, তবে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস আমার হবে না।" অভ্রর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।

সময় পেরিয়ে যায়। অভ্রর চাকরি অন্য শহরে বদলি হয়। বিদায়ের দিন অভ্র কথাকে একটি চিঠি দিয়ে যায়। তাতে লেখা ছিল:
"তুমি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ। যদি কখনো মনে হয় আমার ভালোবাসার বন্ধনকে তুমি গ্রহণ করতে পারো, তবে আমার অপেক্ষায় থেকো।"

কথা সেই চিঠি বুকের কাছে ধরে রাখে। দিন, মাস, বছর কেটে যায়। অভ্র ফিরে আসে। কথার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সে বলে, "আমি এখনও তোমার উত্তরের অপেক্ষায় আছি।"

কথা মুচকি হেসে বলে, "যদি আমি তোমার চিঠি এখনো রেখে দিয়ে থাকি, তবে বুঝবে আমার উত্তর কী ছিল?"

তাদের চোখে জল। কিন্তু সেই জল আনন্দের, ভালোবাসার।

এভাবেই তৈরি হয় এক চিরন্তন বন্ধন, "ভালোবাসার বন্ধন"

No comments:

Post a Comment